Friday, December 26, 2014

শপথ- সলিল চৌধুরী


সেদিন রাত্রে সারা কাকদ্বীপে হরতাল হয়েছিলো
সেদিন আকাশে জলভরা মেঘ
বৃষ্টির বেদনাকে বুকে চেপে ধরে থমকে দাঁড়িয়েছিলো
এই পৃথিবীর আলো বাতাসের অধিকার পেয়ে
পায়নি যে শিশু জন্মের ছাড়পত্র
তারই দাবী নিয়ে সেদিন রাত্রে
সারা কাকদ্বীপে
কোন গাছে কোন কুঁড়িরা ফোটেনি
কোন অঙ্কুর মাথাও তোলেনি
প্রজাপতি যতো আরও একদিন গুটিপোকা হয়েছিলো
সেদিন রাত্রে সারা কাকদ্বীপে হরতাল হয়েছিলো
তাই
গ্রাম নগর মাঠ পাথার বন্দরে তৈরী হও
কার ঘরে জ্বলেনি দীপ চির আঁধার তৈরী হও
কার বাছার জোটেনি দুধ শুকনো মুখ তৈরী হও
ঘরে ঘরে ডাক পাঠাই তৈরী হও জোটবাঁধো
মাঠে কিষান কলে মজুর নওজোয়ান জোট বাঁধো
এই মিছিল
এই মিছিল সবহারার সবপাওয়ার এই মিছিল
প্রতিভা আর যশোদা মার রক্তবীজ এই মিছিল
স্বামীহারা অনাথিনীর চোখের জল এই মিছিল
শিশুহারা মাতাপিতার অভিশাপের এই মিছিল
এই মিছিল সবহারার সবপাওয়ার এই মিছিল
হও সামিল
আমর বুকে এলো যখন কোটি প্রাণের স্বপ্ন
কোটি মনের বরফ জমা অগাধ সম্ভাবনা
কোটি দেহের ঘৃণার জ্বালা অগ্নিগিরি বুকে
কোটি শপথ পাথর জমা গোনে শেষের লগ্ন
তবে আমার বজ্রনাদে শোন রে ঘোষনা
কোটি দেহের সমষ্টি এই আমিই হিমালয়
আমি তোদের আকাশ ছিঁড়ে সূর্য পড়ি ভালে
তুচ্ছ করি কুজ্ঝ্বটিকা মেঘের ভ্রুকুটিও
জানাই তোদের কারা আছিস ঘৃণ্য পরগাছা
কোটি বুকের কলজে ছিঁড়ে রক্ত করিস পান
বুকে শ্বাপদ মুখে তোদের অহিংসা অছিলা
এবার তবে করবি তো আয়

আমার মোকাবিলা

শাড়ি-সুবোধ সরকার




বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটা কে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখল সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, ‘ তোর নাম অভিমান
তৃতীয় থাকে তিনটি ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রং যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ
সারা বছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি সে কি করে এক জীবনে পড়বে ?

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সন্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে নীচে নেমে ডান দিকে
যাকে বলে এল
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিস থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে
-এর নাম রাজনীতি, -বলেছিল পাড়ার লোকেরা

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
একদিন দুপুরে শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে
শাশুড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে সে একা

কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘বাঁচাও
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা

অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা

Sunday, December 14, 2014

অস্ত্র সমর্পণ – হেলাল হাফিজ


মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার

আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।