কবি ও কবিতা ( Poesy )

Monday, August 24, 2015

আমাদের মা -হুমায়ুন আজাদ

আমাদের মা 
-হুমায়ুন আজাদ

আমাদের মাকে আমরা বলতাম ‘তুমি’,বাবাকে ‘আপনি’।

আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতো না।
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে মাকে আপনি বলার কথা আমাদের
কোনোদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো,কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর,আমাদের বর্ণের,আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা ‘আল্লার’ মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্টপুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না।
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি।
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়,সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম

থেকে নগর পর্যন্ত আমাদের মা আজো টলমল করে।
Posted by Unknown at 9:47 AM 1 comment:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: আমাদের মা -হুমায়ুন আজাদ

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা -বুদ্ধদেব বসু

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা 
                  বুদ্ধদেব বসু

আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,
শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,
ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-
শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।

কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে,
কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই;
তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল-
অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।

কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন,
তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু?
বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না
নিজেদের-
শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।

আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই,
যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে,
যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ-
নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।

আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়।
দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়,
যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো
অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ-

সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত,
যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়,
রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ-
যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব

সব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো
ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়-
সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।

আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ,
প্রাণ কত বিপন্ন।
কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান,
যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর
মৃত্তিকায়-
চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।

তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি,
আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া?
মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের-
যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।

নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক,
যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে,
রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য
এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা :

আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ-
সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে
নিশান।
মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে

শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার
Posted by Unknown at 9:43 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: মুক্তিযুদ্ধের কবিতা বুদ্ধদেব বসু

অপরিচিতি – আবুল হাসান



যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!

স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত

আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!
Posted by Unknown at 9:39 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: অপরিচিতি – আবুল হাসান

আকাঙ্খা – আবুল হাসান


তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাবআমার মনের মত করে ।
তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়েতরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।
তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়েনিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।
তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে

বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।।

Posted by Unknown at 9:38 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: আকাঙ্খা – আবুল হাসান

প্রশ্ন – আবুল হাসান


চোখ ভরে যে দেখতে চাও
রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?
বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও
জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?
এত যে কাছে আসতে চাও
কতটুকু সংযম আছে তোমার?
এত যে ভালোবাসতে চাও

তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?
Posted by Unknown at 9:34 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: প্রশ্ন – আবুল হাসান
Newer Posts Older Posts Home
Subscribe to: Comments (Atom)

Wikipedia

Search results

Translate

Search This Blog

About Me

Unknown
View my complete profile

Blog Archive

  • ►  2016 (3)
    • ►  May (3)
  • ▼  2015 (7)
    • ▼  August (5)
      • আমাদের মা -হুমায়ুন আজাদ
      • মুক্তিযুদ্ধের কবিতা -বুদ্ধদেব বসু
      • অপরিচিতি – আবুল হাসান
      • আকাঙ্খা – আবুল হাসান
      • প্রশ্ন – আবুল হাসান
    • ►  February (2)
  • ►  2014 (34)
    • ►  December (20)
    • ►  November (14)

Followers

Powered By Blogger

Contact Form

Name

Email *

Message *

Watermark theme. Theme images by neomistyle. Powered by Blogger.